Dhaka ১২:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২৭৩ Time View

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে গোটা বিশ্বের সম্মিলিত অঙ্গীকারের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এমন একটি বিশ্ব গড়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যেখানে ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবিক মর্যাদা সবার জন্য সমুন্নত থাকবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ অঙ্গীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছর মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে মৌলিক স্বাধীনতার অবক্ষয়, ক্রমাগত বাড়তে থাকা অসমতা, অসহিষ্ণুতা, জলবায়ু সংকট, কর্তৃত্ববাদ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উত্থানের চ্যালেঞ্জের মুখে এই প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক।

প্রধান উপদেষ্টা  বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র মর্যাদা, সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতে একটি মৌলিক দলিল, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানবাধিকার সার্বজনীন, অবিচ্ছেদ্য এবং সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। 

৭৬ বছর আগে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার পর থেকে বিশ্বে নাগরিক মর্যাদার অগ্রগতি ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশের দীর্ঘস্থায়ী সংকট নির্দেশ করে যে বিশ্বমানবতা সৃষ্টির জন্য আমাদের এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া বাকি।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার দিকে খুব কমই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান বর্বর নিপীড়নের অর্থ হলো আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য একটি ন্যায্য, দীর্ঘস্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, আমরা গর্বিত যে, নয়টি মূল মানবাধিকার চুক্তিতে সই করা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে নিহিত মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে অদম্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষা কতটা দৃঢ় তা প্রমাণ করে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ন্যায্য অধিকারের জন্য আমাদের জনগণ তাদের দৃঢ় প্রত্যয়কে পুনর্ব্যক্ত করেছে। আমাদের তরুণ সমাজ যে সাহস নিয়ে মানুষের অধিকার রক্ষায় ব্রত হয়েছে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করার যাত্রা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সর্বত্র মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারে অবদান রাখবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের গঠনমূলক সম্পৃক্ততা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে থাকবে।

জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং সুশাসন সুনিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের সেই ঐকান্তিক প্রত্যাশার ভিত্তিতে সার্বিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে ২৯-৩০ অক্টোবর ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার গৎ. ঠড়ষশবৎ ঞহৃৎশ বাংলাদেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি মিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, আর্থ-সামাজিক কাঠামো এবং বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সরকার প্রস্তাবিত ধারণাটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে কারিগরি সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রস্তাবিত এই মিশনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্ম-পরিধি, গঠন কাঠামো ও পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 

প্রস্তাবিত মিশনটি স্থাপনপূর্বক এটিকে কার্যকরী করার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে সরকার আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

সবার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার

Update Time : ০৭:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে গোটা বিশ্বের সম্মিলিত অঙ্গীকারের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এমন একটি বিশ্ব গড়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যেখানে ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবিক মর্যাদা সবার জন্য সমুন্নত থাকবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ অঙ্গীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছর মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে মৌলিক স্বাধীনতার অবক্ষয়, ক্রমাগত বাড়তে থাকা অসমতা, অসহিষ্ণুতা, জলবায়ু সংকট, কর্তৃত্ববাদ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উত্থানের চ্যালেঞ্জের মুখে এই প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক।

প্রধান উপদেষ্টা  বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র মর্যাদা, সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতে একটি মৌলিক দলিল, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানবাধিকার সার্বজনীন, অবিচ্ছেদ্য এবং সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। 

৭৬ বছর আগে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার পর থেকে বিশ্বে নাগরিক মর্যাদার অগ্রগতি ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশের দীর্ঘস্থায়ী সংকট নির্দেশ করে যে বিশ্বমানবতা সৃষ্টির জন্য আমাদের এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া বাকি।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার দিকে খুব কমই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান বর্বর নিপীড়নের অর্থ হলো আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য একটি ন্যায্য, দীর্ঘস্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, আমরা গর্বিত যে, নয়টি মূল মানবাধিকার চুক্তিতে সই করা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে নিহিত মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে অদম্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষা কতটা দৃঢ় তা প্রমাণ করে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ন্যায্য অধিকারের জন্য আমাদের জনগণ তাদের দৃঢ় প্রত্যয়কে পুনর্ব্যক্ত করেছে। আমাদের তরুণ সমাজ যে সাহস নিয়ে মানুষের অধিকার রক্ষায় ব্রত হয়েছে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করার যাত্রা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সর্বত্র মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারে অবদান রাখবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের গঠনমূলক সম্পৃক্ততা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে থাকবে।

জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং সুশাসন সুনিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের সেই ঐকান্তিক প্রত্যাশার ভিত্তিতে সার্বিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে ২৯-৩০ অক্টোবর ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার গৎ. ঠড়ষশবৎ ঞহৃৎশ বাংলাদেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি মিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, আর্থ-সামাজিক কাঠামো এবং বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সরকার প্রস্তাবিত ধারণাটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে কারিগরি সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রস্তাবিত এই মিশনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্ম-পরিধি, গঠন কাঠামো ও পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 

প্রস্তাবিত মিশনটি স্থাপনপূর্বক এটিকে কার্যকরী করার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে সরকার আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন তিনি।