শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে প্রতিবছরই ধান পাকার সময় হলে হাতির আক্রমণ শুরু হয়। হাতি দলবদ্ধভাবে কৃষকের ধান খেতে প্রবেশ করে ধান খেত বিনষ্ট করে। গত কয়েকদিনে হাতির আক্রমণে উপজেলার সীমান্তবর্তী বালিজুরী, ছোট বালিজুরী, রাঙ্গাজান সহ কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের ধান খেত বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ঠিকমতো সরকারি কোন সহযোগিতা না পেয়ে অসহায় দিনাতিপাত করছে। ফসল রক্ষায় কৃষকরা রাত জেগে পাহাড়া দেয়। কিন্তু হাতির দলের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। এভাবেই বছরের পর বছর হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব চলছে। কিন্তু সমাধানের কোন উপয় বের হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ধান খেতের ভয়াবহ চিত্র। কৃষকদের তথ্য মতে গত দুই-তিন রাতে প্রায় ৩শ থেকে ৪শ শতাংশ জমির ধান খেত বিনষ্ট করেছে। হাতির দল পা দিয়ে মাড়িয়ে ধান খেত বিনষ্ট করে ফেলেছে। মাটির সাথে মিশে গেছে ধান গাছ। কৃষকরা সারা রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও ফসল রক্ষা করতে পারছে না। হাতি তাড়াতে স্থায়ীভাবে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। হাতির দল ধান খেতে নামলে কৃষকরা মশাল, লাইট, জেনারেটরের শব্দ দিয়ে হাতি তাড়াতে চেষ্ট করে। কিন্তু হাতির দল ফসল সাবার করে তবেই চলে যায়। এভাবে চলে হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব। এখনো হাতির দল বালিজুরী পাহাড়ে অবস্থান করছে। তাই হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে সীমান্তবর্তী কৃষকদের।
কথা হলে বালিজুরী গ্রামের খোকা মিয়ার স্ত্রী কৃষাণী নাজমা বলেন, আমার ৭৫ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। গত রাতে হাতির দল আমার সম্পুর্ণ খেত নষ্ট করে ফেলেছে। কৃষি অফিসের কোন লোকজন আমাদের এখানে আসে না। আমরা সরকারের কোন সহযোগিতা পাই না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়ে থাকি বলে আমরা কি সরকারের নাগরিক না? কেন আমরা কোন সহযোগিতা পাবো না? মৃত মতিউর রহমানের স্ত্রী হামিদা খাতুন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। হাতির আক্রমণে আমার ১০০ শতাংশ জমির ধান খেত নষ্ট করেছে। আমরা মশাল, তেল কোন কিছুই পাই না। এখন আমার সংসার কিভাবে চলবে। আমার না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে। কৃষক সাইফুল মিয়া বলেন আমার ৩০ শতাংশ জমির ধান খেত হাতির দল মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। প্রতিবছরই হাতির আক্রমণে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কোন সহযোগিতা করা হয় না। কৃষি অফিসের লোকজন জন আমাদের এখানে আসে না। এছাড়াও, ইসরাফিলের ৫০ শতাংশ, সবদুলের ৬০ শতাংশ, হানিফ নাংলা’র ৩০ শতাংশ, কফিলের ৬০ শতাংশ, গোলাপের ২০ শতাংশ সহ বিভিন্ন কৃষকের ধান খেত বিনষ্ট করেছে।
বালিজুরী রেঞ্চের বিট কর্মকর্তা মাজহারুল হক বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সারা রাত জেগে ইআরটি দলের সদস্য ও স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে হাতি তাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কৃষকদের ধান খেত রক্ষায় সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। হাতি তাড়াতে বনবিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান আকন্দ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ করে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের নিকট পাঠাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা আসলে আমরা তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিবো। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাসিব-উল-আহসান বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
মো. তাসলিম কবির 









