বর্ষা মৌসুম এলেই বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর বাজারসহ আশপাশের এলাকা। মহারশি নদীর পানি উপচে পড়ে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, বাজার, রাস্তাঘাট ও জনপদে। ঝিনাইগাতীতে গত এক দশকে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর তীর ভেঙে অন্তত দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কয়েকশত লোক ভিটে-মাটি, ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ঢলের তোড়ে ভেসে প্রতিবছরই মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কৃষকদের কয়েক কোটি টাকার আবাদ ফসল এবং প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার একরের ওপর ফসলি জমিতে বালির আস্তরণ পড়ে অনাবাদি হয়ে পড়েছে। গাছপালাসহ অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। মহারশি নদী এখন ঝিনাইগাতীবাসীর দুঃখের সমার্থক হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ঝিনাইগাতীবাসীকে সুরক্ষায় মহারশি নদীর দুই তীরে টেকসই, স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণের দাবি উঠেছে।
১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সামাজিক সংগঠন ‘ভয়েস অব ঝিনাইগাতী’ মহারশি নদীতে টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা সাধারণ মানুষের প্রায় ৪ হাজার গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর জেলা শহর থেকে নাগরিক প্লাটফর্ম জনউদ্যোগ-এর আয়োজনে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদল ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রতিনিধি দলটি ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অবিলম্বে মহারশি নদী খনন ও নদীভাঙন রোধে দুইপাড়ে টেকসই স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণে দাবি জানিয়েছেন। সেসময় ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনিরের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংগঠক শেরপুর ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, ঝিনাইগাতী ক্ষুদ্র বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান খান মক্কু, জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির অর্থ সম্পাদক দেবদাস চন্দ বাবু, পরিবেশকর্মী আসাদুজ্জামান রূপম প্রমুখ। পরে একই দাবিতে জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ইউএনও’র মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, নদী খননসহ উজানের নলকুড়া এলাকা থেকে ভাটির দিকে অন্তত ৯ কিলোমিটার করে মহারশি নদীর দুই তীরে টেকসই এবং স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। মহারশি নদীর দুই তীরে স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মিত হলে সাধারণ মানুষ যেমন নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি সহায়-সম্পদ এবং জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি থেকেও রক্ষা পাবে। তাছাড়া স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মিত হলে এলাকাটি একটি বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠবে। এতে নতুন কর্মসংস্থান ও আয়বর্ধনমুলক কর্মকাণ্ড বাড়বে। যার ফলে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে। এজন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝিনাইগাতীবাসীর সুরক্ষায় মহারশি নদীর দুই তীরে টেকসই, স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
হারুন অর রশিদ দুদু : 









