শেরপুরে দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক, আর্থিক এবং আইনগত অধিকার সহ মানসম্মত পণ্য ও সরকারি সেবা গ্রহণে অভিগম্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে নাগরিক সচেতনতা। এতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে। অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা, স্থানীয় সম্পদ আহরন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা এসেছে। অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নবযাত্রার সূচনা হয়েছে। শেরপুরে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৩ বছর মেয়াদে বাস্তবায়িত ‘সেবার মান নিশ্চিতকরণে নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্পে’র আওতায় এমন চিত্র ওঠে এসেছে। সোমবার (২৮ মার্চ) জেলা প্রশাসকের সমম্মেলন কক্ষে ওই প্রকল্পের আওতায় গঠিত জেলা নাগরিক কমিটির আয়োজনে জেলা পর্যায়ে এডভোকেসি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. তোফায়েল আহমদ-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক মো. শরিফুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় এতে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন প্রিপ ট্রাস্টের উপ-পরিচালক শেফালী বেগম, প্রকল্প সমন্বয়কারী সঞ্জিত কুমার দে। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লুৎফুল কবীর, ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর, এসিল্যান্ড জয়নাল আবেদীন, গৌরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম পলাশ, উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, শেরপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, সাংবাদিক হাকিম বাবুল, আদিল মাহমুদ উজ্জল, গারো নারী জসিন্তা দফে প্রমুখ। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক সহ অর্ধশতাধিক সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় প্রকল্পের অর্জনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানানো হয়, গত আমন মৌসুমে সার ডিলার ও সারের মূল্য তালিকা প্রকাশ করার মাধ্যমে কৃষকের ১২ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ৩২৮ জন কৃষকের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। সমাজসেবা বিভাগকে অবগত করানোর কেবলমাত্র একটি আবেদনপত্র দেওয়ার মাধ্যমে ৮৯ জন উপকারভোগীর মোবাইল ফোন নম্বরের জটিলতা নিরসন করে ৬ মাস ধরে বঞ্চিত হওয়া বিধবাভাতার জটিলতা নিরসন হয়েছে।
ইউকে এইড ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রিপ ট্রাস্ট শেরপুরে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৩ বছর মেয়াদী ‘সেবার মান নিশ্চিতকরণে নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্প’টি বাস্তবায়ন করে। জানুয়ারী ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার ৬৮৬ জন। প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক দল তৈরী করা হয়েছে। স্থানীয় সেবারমান উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে মতবিনিময় সভা ও প্রশিক্ষণ, কমিউনিটি স্কোরকার্ডের ব্যবহার, ইউনিয়ন ও পৌরসভার উন্মুক্ত বাজেট, ইউনিয়ন পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির পুনর্গঠন ও নিয়মিত সভাকরণ, তথ্যবোর্ড স্থাপন, সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতাদের নিয়ে গণশুনানীর আয়োজন করা হয়। প্রকল্প সমাপনীতে সেবা সহজীকরণের লক্ষে ইউনিয়ন পরিষদে গণশুনানী চলমান রাখা, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবপোর্টাল হালনাগাদ রাখা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে নিয়মিত কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে নাগরিক কমিটির সক্রিয় ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বআরেপ করে বিভিন্ন সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।