শেরপুর জেলা পুলিশ কর্তৃক রচিত সদর উপজেলার ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা কাহিনী নিয়ে নাটক ‘সূর্যদীর গল্প’ শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সূর্যদী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে মঞ্চায়িত হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি। এসময় তিনি বলেন, আমরা অনেকে ১৯৭১ সালের (২৪ নভেম্বর) সূর্যদী গণহত্যার কথা ভুলে গেছি। কিন্তু পুলিশ সুপার শেরপুর জেলায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধে সূর্যদী গণহত্যার বিষয় গুলো স্মরণ করে এবং মনে প্রাণে দিবসটি লালন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই যদি শহীদদের পরিবারকে সম্মান করি, আমি মনে করি যুদ্ধাহত পরিবার গুলো অনেক সম্মানিত হয় এবং তাদের অতীতের হারানো ব্যথা গুলো ভুলে যাবে।
এতদিন মানুষ শুধু এই সূর্যদীর গণহত্যা সম্পর্কে শুনেছেন কিন্তু আজ পুলিশ সুপারের গবেষণা ও সার্বিক তত্বাবধানে যে নাটকটি আমরা দেখলাম এটি দেখার পর আমরা কিছুক্ষণের জন্য সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ফিরে গিয়ে ছিলাম। তরুণ প্রজন্ম এই মঞ্চায়নটা দেখে আমি মনে করি তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। পরে তিনি পুলিশ সুপারসহ সহযোগী সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
পুলিশ সুপার তার বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। সেই সাথে এই সূর্যদীর মাটিতে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘সূর্যদীর গল্প’ নাটকে আফছারের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কাহিনী আমরা সারাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। এক আফছারের জীবনের বিনিময়ে প্রায় ৪৯ জন যারা বেঁচে গিয়ে ছিলেন এবং তাদের মনে যারা জীবিত আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতেই আমাদের এই আয়োজন।
সভাপতি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ছিলেন সেই কালের সাক্ষী। আমরা আপনাদের এই বীরত্বের কথা ও দুঃসাহসী ইতিহাস গুলোকে ধারন ও লালন করি। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে চায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। বঙ্গবন্ধুকে আমরা সকল সমালোচনা ঊর্ধ্বে রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি। পরিশেষে সকল কলাকৌশলী ও যারা অভিনয় করছেন সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান পুলিশ সুপার।
এর আগে সূর্যদী যুদ্ধ ও গণহত্যা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এম এ হাসেম সূর্যদী গণহত্যা নিয়ে জানান, পাক হানাদার বাহিনী গ্রামটিতে হামলা চালায়। এলাকার লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনী ছুড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। ওই সময় গ্রামের একটি ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন দূর থেকেই ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। গুলির আওয়াজ পেয়ে পাকবাহিনীরা লাইনে দাঁড় করানো লোকদের ফেলে রেখে ছুটে যায় তার সন্ধানে। পরে মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন ও সূর্যদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামানকে একটি ধানক্ষেতে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকসেনারা। সেই সাথে শহীদ হয় গ্রামের মোট ৪৯ জন। শেরপুরবাসীর কাছে এক ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন।
এসময় শেরপুর পুলিশ লাইন্স ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার কমান্ডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, শেরপুর পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
হামিদুর রহমান/দেশবার্তা