এবার শীতে মানুষ বিনোদনের জন্য পিকনিক স্পট ও পর্যটন কেন্দ্রমুখী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড় গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে গড়ে উঠা ‘গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে এখন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। পার্টির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই এখানে ছুটে আসছে হাজার হাজার ভ্রমন পিপাসু মানুষ। এখানকার পাহাড় ঝরনা, খাল, টিলা, আর ঘন ঘন সবুজ বন-বনানী অতি সহজেই আগতকারীদের আকর্ষন করে হাতছানি দিয়ে ডাকে। গারো পাহাড়ের বুক চিড়ে আঁকা বাঁকা বন্ধুর পথ। পাহাড়ী অঞ্চলের এক প্রান্ত দিয়ে অন্য প্রান্তে চলে গেছে। গোটা গারো পাহাড় জুড়ে হরেক রকমের লতা-পাতা ও সবুজ বৃক্ষরাজী দেখে যে কারো প্রাণ জুড়িয়ে যায়। দিগন্ত প্রসারিত মেঘ মালার সারি যেন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়েই মিলে গেছে। এখানকার পাহাড় গুলো ছোট ও মাঝারী ধরনের হলেও সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের পাহাড় অনেক বড়। এপারে ঠায় দাঁড়িয়েও তা প্রত্যক্ষ করা যা অনায়াশেই। ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ের মধ্য ভাগে ‘গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে’ গড়ে উঠেছে ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষন করতে। বট বৃক্ষকে কেন্দ্র করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক গড়ে তোলেন এই ‘অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র’। পর্যটন কেন্দ্রটিতে রয়েছে আকর্ষনীয় আঁকা বাঁকা পদ্ম সিঁড়ি, লেকের মাঝে কৃত্তিম দ্বীপ, আকাশ চুম্বী সাইট ভিউ টাওয়ার, চুকুলিপি শিশু পার্ক, জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রীজ, ক্যাবল কার, সাম্পান নৌকা, প্যাডেল বোট, আনন্দ পার্ক। যেখানে উঠলেই মাত্র ৫ টাকায় দেখা যায় ভারত। শান বাঁধানো বিশাল বট বৃক্ষ। লেকের পানির ধারেই শোভা পাচ্ছে শিলা মৎস্য কুমারীর প্রতিকৃতি, লেকের ওপর সুদৃশ্য দ্বিতল রেস্তোরা, রয়েছে প্যাডেল বোট, হাঁস নৌকা, আকর্ষনীয় ঘাট সিল রোলের ওপর নির্মিত দোল খাওয়া ব্রীজ, টানেল পাতালপুরী সহ আরো কত কিছু! বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রকে আকর্ষনীয় করতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আনন্দময় দৃশ্য স্থাপন করে গেছেন। যেমন- জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রীজ, ক্যাবল কার, সাম্পান নৌকা, প্যাডেল বোট, আনন্দ পার্ক। এছাড়াও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে শিশু পার্ক, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, অর্কিড হাউস, মিনি চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন জীবজন্তু, জানুয়ারের প্রতিকৃতিও স্থাপন করা হয়েছে। জলপ্রপাত, কৃত্তিম ঝরনা, রেইবো ব্রীজ নির্মিত হয়েছে। শীত মৌসুমেতো বটেই, গোটা শুষ্ক মৌসুম জুড়েই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী গারো পাহাড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে এখানে বনভোজনে আসে। এখানকার পাহাড়ী উপজাতীয়দের চাষাবাদ, তাঁত ও কুটির শিল্প, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, হাসি, কান্না ইত্যাদি জীবনধারা বেশ আকর্ষনীয়, উল্লেখযোগ্য ও মনে রাখার মতো। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গোটা গজনী পাহাড় রূপ নেয় উৎসব নগরীতে। প্রচন্ড ভিড় হয় ‘গজনী অবকাশে’। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা বিশেষ করে পাহাড়ি টিলা থেকে ঝরনায় ঝুলন্ত ব্রীজ, ঝরনার ওপর ফাস্ট ফুডের দোকান, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে কুমিরের মুখ দিয়ে প্রবেশ করে অন্য পাহাড় দিয়ে বের হওয়া এবং প্রাকৃতিক বন বনানী আর পাহাড়, টিলা ও ঝরনা দেখে পর্যটকরা আনন্দে মেতে উঠে। বন্ধের দিনতো তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না ‘অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে’। অবশ্য সব মৌসুমেই এই পর্যটন কেন্দ্রে পিকনিক পার্টির ভিড় থাকে চোখে জনীন টুরিষ্ট স্পটে যা যা থাকা দরকার তার সবই রয়েছে এখানে। এখানে আসার জন্য সড়কপথে যোগাযোগও চমৎ পড়ার মতো। সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রের ভেতর ‘গজনী অবকাশ’ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় ও মনমুগ্ধকর। যাকে এক কথায় বলা যায় একটি আকর্ষনীয় ‘টুরিষ্ট স্পট’। সার্ব কার। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে পাকা রাস্তা। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে সড়ক পথে শেরপুর ও ঝিনাইগাতী হয়ে সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। ঝিনাইগাতী থেকে গজনী অবকাশে পৌঁছতে মাত্র সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ফারুক আল মাসুদ জানান, জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার স্যারের দিক নির্দেশনায় গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলার চিন্তা রয়েছে তাদের।
হারুন অর রশিদ দুদু/দেশবার্তা