১১ জানুয়ারি বুধবার রাতে শেরপুরে ষাটের দশকের অন্যতম শক্তিমান কবি ও চিত্রশিল্পী রণজিত নিয়োগীর সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিনটি স্মরণে সন্ধ্যায় রনজিত নিয়োগির ভক্তকুল ও কবি-সাহিত্যিকরা কবির গৃর্দানারায়ণপুরস্থ বাসভবনে সমেবত হয়। পরে তার স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
কবির একমাত্র পুত্র ইঞ্জিনিয়ার ও কবি শুভজিত নিয়োগীর আন্তরিক আপ্যায়নের মুগ্ধতায় কবি পরিবারের একান্ত সান্নিধ্যে অনেকটা সময় কাটায় উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকরা। কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চলে নানান স্মৃতিকথা।
কবিকে নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট গবেষক প্রাবন্ধিক ড. সুধাময় দাস, শিল্প সমালোচক বিকাশ কর্মকার, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতি প্রেমী হারান চন্দ্র সাহা এবং কবি রবিন পারভেজ। কবির কবিতা থেকে পাঠ করেন কবির ভাতিজি শিক্ষিকা সুদেষ্ণা নিয়োগী। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক কবি রীতেশ কর্মকার এবং কবি শুভজিত নিয়োগী। কবি ও চিত্রশিল্পী রণজিত নিয়োগী ১৯৪২ সালে ৭ নভেম্বর শেরপুর জেলা শহরের গৃদ্দানারায়নপুরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন প্রখ্যাত বিপ্লবী কমরেড রবি নিয়োগী এবং মা কমরেড জোৎস্না নিয়োগী। আট বছর বয়সেই ছবি আঁকার এবং ১২ বছর বয়সে কবিতা লেখার সূচনা হয়। তিনি ১৯৫৯ সালে মেট্টিক পাশ করে ঢাকার তৎকালের চারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তৎকালের দৈনিক সংবাদে তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তার কবিতা দৈনিক আজাদ, দৈনিক বাংলার বাণীসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাহিত্য সংকলেনে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৪ সালে ঢাকা চারু ও কারু কলা ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় স্টাফ আর্টিস্ট পদে যোগদান করে তার চাকুরি জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প সংস্থায় সহকারী ডিজাইনার পদে চাকুরি নেয়। কিন্তু ১৯৮৪ সালে তার মা জোৎস্না নিয়োগী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি চাকুরি ছেড়ে শেরপুর চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা সদরঘাট এলাকার একটি প্রেসে তার লেখা “কাল আগামীকাল” নামে একটি কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হলেও দেশ স্বাধীনতার ডাকে উত্তাল হয়ে উঠলে ওই প্রেস বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তিতে তার সেই পান্ডুলিপিও খোয়া যায়। এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতা পারিজমান। সেখানে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আয়োজিত বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের অঙ্কিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহন করেন। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি বিঞ্চু দে সম্পাদিত “বাংলাদেশের কবিতা একগুচ্ছ” কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেন। রণজিত নিয়োগী শেরপুরে উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বিপ্লোবী রবি নিয়োগী স্মৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতি সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তার সম্পাদনায় দু’টি কাগজ ‘বজ্রে বাজে বাঁশি’ এবং ‘মৃৎ’। কবি উদয় সংকর রতনের সাথে যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ‘ছিঁড়ে আনো ফুটন্ত সকাল’। তাছাড়া তিনি প্রচুর বই ও ম্যাগাজিন এর প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন। কবি রণজিত নিয়োগীর ২০১৬ সালে ১১ জানুয়ারি জীবনাবসান ঘটে।
হামিদুর রহমান/দেশবার্তা