শেরপুর জেলা শহরের পৌরসভার মধ্যশেরী শিংপাড়া মহল্লায় গত শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে মাদকসেবী স্বামী পেশায় অটো চালক মাশেক (৩৮) কর্তৃক স্ত্রী রোকসানা বেগম (২৮) ও শিশু ছেলে রাফি (১১) কে শ্বাসরোধে হত্যা করে ভাড়াটিয়া বাসার সেপটি ট্যাংকিতে গুম করার পর ৫ দিনপর বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে সদর থানার পুলিশ নিহত মা ও ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে। সেই সাথে ঘাতক স্বামী মাশেক, তার মা মিনা বেগম (৫০) এবং তার বোন সুশিলা বেগম (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়ড়া গ্রামের জনৈক জালাল উদ্দিনের ছেলে মাশেক বিগত ২০০৮ সালে শেরপুর পৌরসভার খরমপুর টিক্কাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মো. সুরুজ মিয়ার মেয়ে রোকসানা বেগমকে বিয়ে করে। বিয়ের পর তাদের সংসারে ২ সন্তানের জন্মগ্রহণ করে। এদিকে বিয়ের পর থেকেই অটো চালক মাশেক মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ে। পরে সে প্রায় সময় স্ত্রী রোকসানা বেগমকে মাদক সেবনের টাকার জন্য মারধোর করতো। স্ত্রী রোকসানা বেগম মাধবপুর ফ্যামিলি নাসিং হোমে কাজ করে সংসারের জন্য কিছুটা আয়ের পথ এবং স্বামীকে সহযোগিতা করে আসছিল। তার পরেও পাষন্ড স্বামী প্রায় সময় স্ত্রী রোকসানা বেগমকে মারধোর করতো। এনিয়ে স্ত্রী রোকসানা বেগম পাষন্ড স্বামী মাশেকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। পরবর্তীতে উভয় পরিবার মিমাংসা করে দেয় এবং মামলা প্রত্যাহার করে নেয় রোকসানা বেগম। জেলা শহরের বিভিন্ন বাসায় স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে মাশেক ভাড়া বাসায় থাকতো এবং তাদের স্বামী স্ত্রী কলহের কারণে বাসার মালিকরা তাড়িয়ে দেয়। পরে বেশ কিছু দিন ওই মহল্লার ধানচাল ব্যবসায়ী বাসেত খানের বাসায় ভাড়া নেয়। এখানেও তাদের স্বামী স্ত্রী ঝগড়া বিবাদ থেমে থাকেনি। এরই জের ধরে শনিবার রাতের কোন এক সময় মাদক সেবী মাশেক স্ত্রী রোকসানা বেগমকে ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রাফিকে হাত পা বেধে গলায় শ্বাসরোধে হত্যা করে ওই ভাড়াটিয়া বাসার সেপটি ট্যাংকিতে তাদের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ফেলে রেখে ঘাতক স্বামী পালিয়ে যায়। এদিকে রোকসানা বেগমের বড় বোন সুফিয়া বেগম ওই ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়ে তার ছোট বোন রোকসানা বেগম ও তার সন্তানদের দেখতে না পেয়ে ৭ ডিসেম্বর বুধবার রাতে সদর থানায় একটি জিডি করেন। পরে জিডির সূত্র ধরে ঘাতক স্বামীকে আটক করা হয়।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বছির আহমেদ বাদল সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এঘটনায় নিহত রোকসানা বেগমের বড় বোন সুফিয়া বেগম ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার শেরপর সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ১১ (ক)/৩০ ধারা দঃ বিঃ ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে স্বামী মাশেককে আদালতে সোপর্দ করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। ওই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ তার মা ও বোনকে গ্রেফতার করেছে।
হামিদুর/দেশবার্তা