শেরপুর জেলার সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় গ্রামে রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে হিজড়া আবাসন প্রকল্প চত্বরে ‘শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেরপুর জনউদ্যোগ আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। প্রিয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ।
সভাপতি তার বক্তব্য শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থা সদস্যদের জীবনমান ও তাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর বর্ণনা করেন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এই সংস্থার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ কি কি উন্নয়ন করলে তাদের জীবনমান উন্নতি হবে এবিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
প্রিয় অতিথি সানজিদা হক মৌ তার বক্তব্যে বলেন, পুনাক সাম্প্রতিক সময়ে গণমানুষ বিশেষ করে নারী সমাজের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে। পুনাক নানা ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, সমাজের দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বৃহত্তর পরিসরে দেশের নারী সমাজের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। পুনাকের মানবিক সেবার অংশ হিসেবে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য পুনাক অনেক রকম কর্মপরিকল্পনা ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সব সময় তাদের পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। হিজড়ারা যে যেই বিষয়ে পারদর্শী তাকে সেই বিষয় আরো প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে পুনাক। সেই সাথে শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সকল সদস্যদের মাঝে পুনাকের পক্ষ থেকে শীতের কম্বল বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম তার বক্তব্য হিজড়াদের পাশে থেকে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার বিষয় প্রতিশ্রুতি দেন। হিজড়াদের মৃত্যু পর তাদের শেষকৃত্য নিয়ে তারা অনেক সামাজিক প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়। সেই সমস্যা সমাধানে তাদের জন্য কবরস্থানের জায়গা নিজ অর্থায়নে করে দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সাথে তিনি যেখানেই থাকুক না কেনো এই জনগোষ্ঠীর কারোর শেষকৃত্যের সময় সকল খরচ নিজ অর্থায়নে সারাজীবন বহন করবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। হিজড়াদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে স্থায়ী আয়-উপার্জনের মাধ্যম তৈরি করতে গৃহপালিত পশু গরু কিনে দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যাদের হস্তশিল্পের দক্ষতা রয়েছে তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করবেন এবং তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সব রকমের সহায়তায় শেরপুর জেলা পুলিশ তাদের পাশে থাকবেন। হিজড়া জনগোষ্ঠী যাতে সমাজের অন্য সকলের মত সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সামাজিক রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা পায় জনপ্রতিনিধিদের ও স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকারের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) সাবিহা জামান শাপলা সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
হামিদুর/দেশবার্তা