আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে ১৭ অক্টোবর বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অক্টোবর মাসব্যাপী নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) শেরপুর জেলায় ব্র্যাকের আল্ট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার।
তিনি ব্র্যাকের উল্লেখিত কর্মসূচির অংশ গ্রহণকারীদের বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টচার্য্য, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহনাজ ফেরদৌস, উপজেলা কৃষি অফিসার রুবাইয়া ইয়াসমীন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. লৎফুল কবির, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আবু ইলিয়াস মল্লিক, শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, ব্র্যাক জামালপুরের জেলা সমন্বয়ক মো. মুনীর হুসাইন খান, জোনাল ম্যানেজার মো. সোলাইমান ইউপিজি, মো. রাফিজুর রহমান, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. সাইদুল ইসলাম, ইউপিজি। দেশজুড়ে অতিদরিদ্র্য নিরসনে ব্র্যাকের ভূমিকার প্রশংসা করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ব্র্যাকের আল্ট্রা-পুওর গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে অতি দরিদ্র মানুষ যে সম্পদ পাচ্ছে এবং তার যথাযথ ব্যবস্থাপনা, সরকারি বিভিন্ন সেফটিনেট কর্মসূচিতে তাদের অর্ন্তভূক্তিকরণ, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে পরামর্শ প্রদান অত্যন্ত ভাল একটি কর্মসূচি। যা সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নে (দারিদ্র বিমোচন, জীবন মান উন্নয়ন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ব্র্যাক অতি দরিদ্রদের নিয়ে এত চমৎকার একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে যা আমার ইতিপূর্বে জানা ছিলনা, দারিদ্র বিমোচনে ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি আছে সেটা আমরা জানতাম। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের সেবা সম্পর্কে যে প্রচারনা করা হয় তাতে সরকারের বিভিন্ন সেবা পেতে জনগন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং সেবা নিতে আসছে, এতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি দ্রুত মূল স্রোতধারায় ফিরে আসবে। ব্র্যাকের এই কর্মসূচি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং ব্র্যাকের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের মোট সংখা পরিসংখ্যান ব্যুরোতে দিতে হবে, যাতে সরকারে দারিদ্র বিমোচন জরিপে এই তথ্য অন্তর্ভূক্ত হয়। আমি ব্র্যাকের এ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করি,’।
জাতিসংঘ এ বছরের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘সর্ব ক্ষেত্রে সবার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখি’। মানুষের মর্যাদা কেবল একটি একক মৌলিক অধিকার নয়,বরং এটি অন্যান্য সকল মৌলিক অধিকারের ভিত্তি’। দিবসটিকে কেন্দ্র করে ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম জামালপুর জেলাসহ বর্তমানে কর্মসূচিটি চলমান রয়েছে এরকম সকল জেলার (৩৭টি) জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মাঠ পরিদর্শন কার্যক্রম আয়োজন করেছে। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে, সরকারের মাঠ পর্যায়ে তথা জেলা প্রশাসকদের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়া এবং জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের কাছে কর্মসূচিটির অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান তুলে ধরা। যা ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অতিদারিদ্র্য দূরীকরণে আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম কিভাবে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা, যা ব্র্যাকের ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য যে, শেরপুর জেলায় ২০১৫ সালে আলট্রা-পুওর গ্র্যজয়েশন প্রোগ্রামের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাটির ১৫৩৯৬ টি অতিদরিদ্র পরিবার ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় এসেছে। ২০২২ সালে শেরপুর জেলায় এই কর্মসূচিটিতে অংশ নিচ্ছে ৫ টি উপজেলার ১৯৫০ টি অতিদরিদ্র পরিবার। ২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪৮ টি জেলার ২১ লক্ষের বেশি অতিদরিদ্র পরিবার আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় এসেছেন যাদের ৯৫% কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ মেয়াদে।
হামিদুর/দেশবার্তা