শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের মানিক চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ইউসুফ আলীর প্রতিবন্ধী ছেলে ও ক্যান্সার আক্রান্ত মো. ফরমান আলীর নামে বিগত ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নালিতাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করে বাদী মো. লাল মিয়া। যার মামলা নং- ১৫, তাং- ১৪/৯/২০১৪। সেই মামলায় তার অনুপস্থিতিতে বিগত ১৪/১২/২০২১ সালে শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত মো. ফরমান আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। এদিকে দীর্ঘ ৯ মাস পর দণ্ডপ্রাপ্ত মো. ফরমান আলী আদালত ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিক চাঁদপাড়া গ্রামের মো. ইউসুফ আলীর প্রতিবন্ধী ছেলে এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত মো. ফরমান আলীর সাথে একই এলাকার জনৈক মো. লাল মিয়ার সাথে জমি সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে মো. লাল মিয়া তার ৯ বছরের শিশু কন্যাকে ভিকটিম সাজিয়ে প্রতিপক্ষ মো. ফরমান আলীকে আসামী করে নালিতাবাড়ী থানায় বিগত ১৪/৯/২০১৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (৪) (খ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে স্থানান্তরিত হয়। নারী ও শিশু ট্রাইঃ মামলা নং- ৪০/২০১৫, জিআর ১৩৪/২০১৪। এ মামলায় আসামী মো. ফরমান আলী আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে মামলার বাদী মো. লাল মিয়ার সাথে আপোষ মিমাংসা করেন।
এদিকে জামিনে থাকা মো. ফরমান আলী মনে করেছিল আপোষ মিমাংসা হওয়ায় তার আর আদালতে যেতে হবে না এবং একথা ভেবেই সে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করছিল। পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করতে ওই প্রতিবন্ধী আসামী মো. ফরমান আলীর অনুপস্থিতিতে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। বেশকিছু দিন পর বিষয়টি দণ্ডপ্রাপ্ত মো. ফরমান আলী জানতে পারেন যে, আদালত থেকে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পরে সে আইনী প্রতিকার পেতে শেরপুর জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মো. আব্দুল মান্নানের পরামর্শে মঙ্গলবার স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
এদিকে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামান দণ্ডপ্রাপ্ত মো. ফরমান আলীকে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এব্যাপারে আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আসামী একজন পঙ্গু, একটি পা নেই ও ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত এবং ক্র্যাচ ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না সবকিছু মিলে পারিপার্শ্বিক বিবেচনার জন্য তার দণ্ড মওকুফের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে তিনি এমনটাই গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।
হামিদুর/দেশবার্তা