আইন্নেরা আমার পোলাডার সঙ্গে একবার কতা কউয়াইয়া দেইন। তার মুখটা আমারে একবার দেহাইন। আমি আর সবার পাইতাছিনা। আমার বাবা সৌদি গেছে। গত মাসেও টেহা পাডাইছে। বাবাডার সাথে প্রত্যিদিন কতা না কইলে আমার রাইতে ঘুম অয়না। কয়েকদিন অয়া গেলো আমার বাবা ফোন দেয়না। অহন সবাই কয় আমার কলিজার বাবাডা নাকি মইরা গেছে! আমার বাবা মরে নাই! যদি মইরা যাইতো তাইলে বাবার লাশ বাড়িত আনতে এত দেড়ি নাগে কে? আইন্নেরা সবাই আমার নগে মিচা কতা কইতাছুইন কে? আমারে কান্দাইয়া আন্নেগরে নাভ কি? আমি কি পাগলা টাগলা অইয়া গেছি? যেকোন মানুষ দেখলে এভাবেই আহাজারি শুরু করেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার সৌদি প্রবাসী এক ছেলে হারানো বৃদ্ধা মা।
বলছিলাম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের মোজাকান্দা গ্রামের বৃদ্ধা মা কদ ভানু বেগমের কথা। তিনি উপজেলার উরফা ইউনিয়নের মোজাকান্দা গ্রামের মো. অহেদ আলীর স্ত্রী এবং সৌদি প্রবাসী পরিবারে জন্য উপার্জনের একমাত্র ছেলে সদ্য মৃত. দুলাল উদ্দিনের মা। এদিকে দুলাল উদ্দিনের মৃত্যুর খবরে তাঁর পরিবারে ও এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
নিজের ক্ষতির বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা কদ ভানু বেগম। তিনি কেঁদে কেঁদে বলছিলেন আমার কলিজার টুকরা পোলাডারে আমার কোলে আইন্না দেন, আমারে শান্তি দেওয়ার জন্য আমার পোলাডা সবকিছু বেইচ্চা বিদেশে গেছে। ও আল্লাহ্, এ কেমন পরীক্ষা তোমার। অবিবাহিত পোলাডারে লইয়া গেলা! স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মো. দুলাল উদ্দিন (২৯) গত ৩ বছর ধরে উপার্জনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পারি জমান। সেখানে নির্মাণ কাজের শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। চলতি বছরের জুলাই মাসের ২০ তারিখে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। মো. দুলাল উদ্দিনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ৫০৫২০৪৯৩৩৪। জন্ম তারিখ: ১০ মার্চ, ১৯৯৩ খ্রি:।
মারা যাওয়ার পরে দীর্ঘদিন গত হলেও অজ্ঞাত কারণে তার মরদেহ বাংলাদেশে আসছে না। ছেলের লাশের অপেক্ষায় দিনরাত কেঁদে কেঁদে কাটাতে হচ্ছে বৃদ্ধ বাবা-মা সহ পরিবার পরিজনকে। প্রবাসে (সৌদিতে) মৃত দুলাল উদ্দিনের মরদেহ বাংলাদেশে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নিহতের সহোদর বড় ভাই মো. আবুল হোসেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস জামালপুর জেলার সহকারী পরিচালকের মাধ্যমে ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ড-এর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন বলে নিহতের বড় ভাই জানান। এতেও কোন আশার আলো না দেখে হতাশ হয়ে পড়ছেন পরিবার পরিজন।
আবুল হোসেন জানান, ভাইয়ের মুখটা বৃদ্ধ মা-বাবাকে শেষ বারের মতো দেখাতে পারলে আমরা শান্তি পেতাম। এব্যাপারে ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছেন নিহতের পরিবারসহ সুশীল সমাজ।
মোশারফ হোসাইন/দেশবার্তা