গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টানা বর্ষণে হঠাৎ ধেয়ে আসে পাহাড়ি ঢল। ফুসে ওঠে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী। প্রবল বেগে চলে ঢলের পানি। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ঢল। ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসে এই পানি। আকস্মিক এই পাহাড়ি ঢলে দুই নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব। ভাসিয়ে নিয়ে যায় চেল্লাখালী নদীর উপর নির্মিত তিনটি বেইলি ব্রিজ। জনজীবন হয়ে ওঠে বিপর্যস্থ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। দুইদিন পর বর্ষণ থেমে যায়। নদীর পানিও নিচে নেমে আসে। রয়ে গেছে শুধু ঢলের পানির তান্ডবের ধকল।
বানবাসী মানুষ জানান, ঢলের এই পানিতে ফুলপুর গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তীরবর্তী তাদের ১২/১৩টি ঘর। নদী তীরের দরিদ্র এই মানুষগুলো দিন আনে দিন খায়। শুধুমাত্র ঘরটিই ছিল তাদের একমাত্র অবলম্বন। বাড়িঘর হারিয়ে গৃহহীন পরিবারগুলো আছে খোলা আকাশের নিচে। তাদের এই কঠিন অবস্থায় সহযোগিতার হাতটি বাড়ায়নি কেউ।
রেনু বেগম, আলেছা বেগম, শাবানা জানান- স্বামী সন্তান নিয়ে ঘর হারিয়ে মানবেতর পরিস্থিতিতে আছি আমরা। আমাদের বসবাসের মাত্র একটি ঘর ছিল। নিয়ে গেছে ঢলের পানি। আমরা বিরাট অসহায়। আমাদের আর কোনো উপায় নেই। ঘর নির্মাণ করার মতো ক্ষমতা নেই। বিগত সময়ে বালু উত্তোলন করার কারণেই নদীর তীর ভাঙতে থাকে। সর্বশেষ প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢল তীরে আঘাত হানে। ছুটে চলে ঢলের পানি এই স্থান দিয়ে। আর এই পানির তোড়ে ভেসে যায় তাদের ঘর।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ক্ষতিগ্রস্থ এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ পূর্বক বানবাসী মানুষগুলোর ঘর ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকা শুকনো খাবার নিয়ে বানবাসী এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্থায়ীভাবে দ্রুত এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী বলেন, ঢলের পানি নেমে গেলেও বসতভিটা হারা এই মানুষগুলোর আর্তনাদ যেন আর থামছে না। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তারা। দরিদ্রতার কষাঘাতে নিষ্পেষিত তাদের জীবন। বানবাসী এই মানুষগুলো কিভাবে নির্মাণ করবে বসতঘর? সর্বনাশা ভোগাইনদী পথে বসিয়েছে এই মানুষগুলোকে আর করেছে গৃহহীন।
মঞ্জুরুল আহসান/দেশবার্তা