শেরপুরে দুইজন নারী চিকিৎসক কিশোরীদের বয়:সন্ধিকালীন বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সেবা, নিরাপদ রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও প্রতিকার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়।
নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে নারী রক্তদান সংস্থা ও আইইডি’র সহযোগিতায় শুক্রবার (২০ মে) বিকেলে শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রী কলেজ মিলনায়তনে কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নারী রক্তদান সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুষ্মিতা শীলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (গাইনী চিকিৎসক) ডা. আরনিকা আফরিন প্রমা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মধুপুর জলচ্ছত্র হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. পান্না ম্রং।
এসময় বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা পরিষদের সাধারন সম্পাদক লুৎফুন্নাহার, নারী উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন, মডেল গার্লস ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ তপন সারোয়ার, শিক্ষক এসএম আবু হান্নান, সাংবাদিক হাকিম বাবুল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, কৈশোরে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বয়সে স্বাস্থ্য সচেতনতার অবহেলায় সামনের দিনে অনেক বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করতে পারে। সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে জীবন বিপন্ন হতে পারে। এজন্য যদি আমরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারি, সতর্ক থাকতে পারি, তবেই নিজেকে সুস্থ্য-সবল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। নারীদের সাহসী হয়ে ওঠার উপর গুরুত্বারোপ করে যৌতুক ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
ডা. আরনিকা আফরিন প্রমা বলেন, নিয়মিত কিছু অভ্যাস আমাদের সুস্থ্য রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সকালে খালি পেটে থাকা যাবেনা, রাতে না খেয়ে ঘুমানো যাবেনা। পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। মাসিকের সময় (রজ:কালীন সময়) পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করাটা নিরাপদ। কিন্তু অপরিচ্ছন্ন ন্যাপকিন ব্যবহার করা যাবেনা। ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে একটি গর্ত করে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে। নারীদের যেকোন ধরনের শারীরিক জটিলতায় সরকারি হাসপাতাল, মাতৃসদন কিংবা চিকিৎসাকন্দ্রে সেবা নেওয়ার সুবিধার কথা জানান। ডা. পান্না ম্রং বলেন, জরায়ু এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে আমরা সহজেই রক্ষা পেতে পারি। জেলা হাসপাতালেই বিনামূল্যে সেকল পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের মা-বোনদের সে বিষয়টি জানাতে হবে। পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তুলতে হবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনীয় টিকা নিতে হবে।
মহিলা পরিষদ নেত্রী লুৎফুন্নাহার বলেন, বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের অভিশাপ। বাল্যবিয়ে মেয়েদের শিক্ষাকে বাঁধাগ্রস্ত করে, সমাজে তাকে পরনির্ভরশীল করে তোলে। বাল্যবিয়ের কারণে সমাজে যৌতুক এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এজন্য বাল্যবিয়ে থেকে আমাদের কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা করতে হবে। কোন এলাকায় বাল্যবিয়ে সংগঠনের সংবাদ পেলে তিনি তাকে কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমনকি শিক্ষকদের কাছেও সে বিষয়ে তথ্য জানানোর অনুরোধ করেন।
নারী উদ্যাক্তা আইরীন পারভীন উপস্থিত সবাইকে বাল্যবিয়ের শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে কলেজ পড়ুয়া অর্ধশতাধিক কিশোরী অংশগ্রহণ করে। পরে জনউদ্যোগ কমিটির পক্ষ থেকে তাদের মধ্যে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
হামিদুর/দেশবার্তা