ঢাকাSaturday , 30 April 2022
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইটি বিশ্ব
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলা
  7. চাকরি চাই
  8. পর্যটন
  9. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. লাইফ স্টাইল
  14. শিক্ষাঙ্গন
  15. সাক্ষাৎকার
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অগ্নিযুগের সিংহপুরুষ বিপ্লবী রবি নিয়োগী : ১১২ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

admin
April 30, 2022 3:52 am
Link Copied!

বিপ্লব-সংগ্রামের সমার্থক রবি নিয়োগী। শত নির্যাতন-নিপীড়ন, কারাভোগ করেও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিঁনি ছিলেন সর্বদা লড়াকু সৈনিক। অগ্নিযুগের সিংহপুরুষ বিপ্লবী রবি নিয়োগী। তিঁনি ছিলেন আদর্শনিষ্ঠ, সৎ, নির্লোভ, নির্ভীক, দেশপ্রেমিক। আজীবন তিঁনি নিষ্ঠ ছিলেন মানুষের কল্যাণ চিন্তায়। বাংলা পঞ্জিকার বর্ষগণনা হিসাব মতে ১৬ বৈশাখ (মোতাবেক ৩০ এপ্রিল) বিপ্লবী রবি নিয়োগীর ১১২তম জন্মবার্ষিকী। আগামী ১০ মে বিপ্লবীর দশম মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধার সাথে আমরা স্মরণ করছি এই মহান বিপ্লবীকে। তিঁনি আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও বেঁচে আছেন তার কর্মে-আদর্শে।

জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও বিপ্লবী রবি নিয়োগী ছিলেন সাধারণ মানুষের কাতারে। তিনি বিপ্লববাদী ছিলেন। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিঁনি ৯২ বছরের জীবনে বিভিন্ন মেয়াদে ৩৪টি বছর কারাভোগ করেছেন। ব্রিটিশদের তৈরী আন্দামান সেলুলার জেল (যা কালাপানি, দীপান্তর নামে পরিচিত) ছাড়াও পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের মধ্যে ২০ বছরই জেলে কাটিয়েছেন। আত্মগোপনে কেটেছে আরও প্রায় দুই যুগ।

প্রথম তিনি গুপ্ত সমিতি যুগান্তরে দীক্ষা নিয়ে বিপ্লববাদী ধারায় সক্রিয় হয়েছিলেন। পরে আরো কয়েক বিপ্লববাদীকে নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ব্রিটিশ-ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে উদ্যোগী হন। সেই ধারায় পাকিস্তানকালে এবং বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। বিপ্লবী রবি নিয়োগী ১৯২৬ সালে শেরপুর জিকে পাইলট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হন। এখানেই মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্বাধীনতা আন্দোলনে দীক্ষা নিয়ে যোগ দেন ‘যুগান্তর’ গোষ্ঠীতে। ১৯২৭ সালে কলেজের ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আনন্দ মোহন কলেজ থেকে রবি নিয়োগী সহ কয়েকজন ছাত্রকে বহিস্কার করা হলে তিঁনি কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে সেখান থেকে আই.এ পাশ করেন।

কলকাতায় অবস্থানকালে তৎকালীন রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত হন এবং যুগান্তর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে কলকাতায় পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিজ ভূমি শেরপুর এসে ১৯২৯ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৩০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ময়মনসিংহে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় প্রথম বারের মতো কারাবরণ করেন। ওই সময় মাস্টার দা সূর্য্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্্রাগার লুণ্ঠনের অব্যবহিত পরেই ময়মনসিংহে যুগান্তর দলের যে কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, রবি নিয়োগী ছিলেন তাদের একজন। ১৯৩১ সালে যুগান্তর পার্টির অর্থ সংগ্রহ সংক্রান্ত ঝিনাইগাতীর সালদা জমিদার বাড়ীতে যুগান্তর দলের হামলার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে রাজশাহী জেলে আটক থাকেন। সেখানে অবস্থানকালে তাঁর সহকর্মীরা জেল সুপারকে হত্যার চেষ্টা করলে রবি নিয়োগীকে বিপজ্জনক বন্দি হিসেবে ‘আন্দামান সেলুলার’ জেলে পাঠানো হয়। এ পর্যায়ে তাঁকে ৭ বছর কারাবরণের শাস্তি দেওয়া হয়। সেলুলার জেলে থাকাবস্থায়ই তিঁনি কয়েকজন বিপ্লবীর সাথে সাম্যবাদে দীক্ষিত হন। ১৯৩২ সালে আন্দামান জেলে অবস্থানরত ৩২ বিপ্লবী কারাবন্দি মিলে ‘কমিউনিষ্ট কনসালডেশন কমিটি’ গঠন করেন। ওই সময়  রবি নিয়োগীর নামের পাশে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক কয়েদি হিসেবে ‘ডাবল স্টার মার্ক’ দেওয়া হয়, যা তাকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাড়িত করেছে। জেলখানার ভেতর কমিউনিষ্ট পার্টির প্রথম শাখা খোলায় ১৯৩৬ মালে তাকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আনা হয়। সেখানে থেকে ময়মনসিংহ জেলে স্থানান্তর করে তাকে মুক্তি দেওয়ার পরদিনই ফের গ্রেপ্তার করায় দেড় বছরের সাজা খাটার জন্য দিনাজপুর ঘোড়াঘাট জেলে বন্দি থাকতে হয়।

১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী অঞ্চলে নেতৃত্ব দেন বিপ্লবী রবি নিয়োগী। ১৯৪৫ সালের ৫-৯ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে নেত্রকোনায় যে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, রবি নিয়োগী ছিলেন তারও অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা।  ১৯৪৮ সালে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তার নেতৃত্ব শেরপুর, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, কমলাকান্দা এবং সুসং অঞ্চলে টঙ্ক আন্দোলন ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছিল। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত মিথ্যা মামলায় ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দি জীবন কাটান। এ সময় তার সহধর্মিণী জ্যোৎস্না নিয়োগীও ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলে কারারুদ্ধ ছিলেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বিপ্লবী রবি নিয়োগী  বন্দি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করা ও নির্বাচনে ভূমিকা রাখায় তিন মাস আটক থাকেন। ১৯৫৫ সালে পুলিশ ধর্মঘটের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৯৫৫-৫৬ সাল পর্যন্ত জেলে কাটান। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসক আইয়ুব খানের নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাভোগ করেন তিঁনি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ বাঁধলে নিরাপত্তা আইনে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালে মুক্তিলাভ করার পর ১৯৭০ সালে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের আমলে তিনি ছয় মাস বন্দি থাকেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ডালু, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট, মহেন্দ্রগঞ্জ সীমান্তে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধা মোটিভেশন ক্যাম্পে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। স্বাাধীনতা যুদ্ধে তার ভুমিকা সবার প্রেরনার উৎস হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিঁনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠিত হলে ন্যাপ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশেন অভ্যুদয়ের পর ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা ছিলের রবি নিয়োগী। তিঁনি তৎকালীণ জামালপুর জেলা ন্যাপের সভাপতি ছিলেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ত্যাগী নেতা রবি নিয়োগী স্বাধীন বাংলাদেশে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশদের জুড়ে দেওয়া ’ডাবল স্টারে’র কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতেও কারাভোগ করেন তিঁনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে তৎকালীণ শাসিকগোষ্ঠি রবি নিয়োগীকে গ্রেপ্তার করে ২ বছর পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখেন। সর্বশেষ তিঁনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের সময় জনসভায় প্রচার অভিযান চালানোর সময়।

বিপ্লবী রবি নিযোগী কলম সৈনিক হিসেবেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠ ছিলেন। তিঁনি সাপ্তাহিক একতা ও দৈনিক সংবাদের শেরপুর জেলা বার্তা পরিবেশক হিসেবে আজীবন কাজ করেছেন। তিঁনি ছিলেন শেরপুরে প্রগতিশীল সাংবাদিকদের একটি প্রতিষ্ঠান। রাজনীতি বিষয়ে তাঁর রচিত নিবন্ধের মধ্যে রয়েছে একাত্তুরের বিজয়গাঁথা : শেরপুর, শেরপুরের ইতিহাস মুসলিম অবদান এবং ভেভাগা আন্দোলন সংগ্রাম ও ভবিষ্যৎ।

বিপ্লবী রবি নিয়োগী সর্বদাই একটি শোষণহীন, বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। তিঁনি গণমানুষ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হননি। তিঁনি বলতেন, দেশ গঠনে ‘সোনার মানুষ’ দরকার। তাঁর ভাষায়-‘কৃষক-মজুর, শ্রমিক, মেহনতি সাধারণ মানুষের কল্যাণে যারা কাজ করে থাকে। যারা সর্বদাই মানবকল্যাণে নিবেদিত, মানুষের অধিকার রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল, কুসংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিমাত্রই সোনার মানুষ।’ আমাদের এখন শত-সহস্র নয়, লক্ষ-কোটি সেসব ‘সোনার মানুষ’ প্রয়োজন।

এই বিপ্লবীদের ত্যাগ-সংগ্রামের হাত ধরেই আমরা আজ স্বাধীন জাতি। পেয়েছি নতুন দেশ, নতুন পতাকা। কিন্তু আমরা তাদেরকে কতটুকু সম্মান কিংবা মূল্যায়ন করতে পেরেছি, তা এক বড় প্রশ্নবোধক। রাষ্ট্রীয় কোন পদকতো দূরে থাক, তাঁদেরকে আমরা ন্যুনতম সম্মানও জানাতে পারছি কী? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার এখন ক্ষমতায়। আমরা কী পারি না, বিপ্লবী রবি নিয়োগীকে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মান জানাতে? ক্ষমতাসীনদের এ বিষয়টি ভাবনায় নেওয়া দরকার। কেবল রবি নিয়োগী নয়, এ ধরনের মানব মুক্তির লড়াইয়ের অগ্রসৈনিকদের সবারই এখন মূল্যায়নের সময় এসেছে। আমরা যদি তাঁদেরকে সম্মান জানাতে পারি, তাহলে ত্যাগী, আদর্শবান জাতি গঠন সহজ হবে।

শেরপুর শহরের গৃর্দানারায়রপুর মহল্লার পুরাতন গরুহাটি এলাকায় বাসিন্দা ছিলেন বিপ্লবী রবি নিয়োগী। তাঁর পূর্ণ নাম রবীন্দ্র চন্দ্র নিয়োগী। পিতা রমেশ চন্দ্র নিয়োগী ও মাতা সুরবালা নিয়োগী। বিক্রমপুরের যোগেশ মজুমদারের কন্য জোৎস্না নিয়োগী ছিলেন রবি নিয়োগীর সহধর্মিনী। জোৎস্না নিয়োগী ছিলেন এদেশের নারী মুক্তি, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির আন্দোলনেরও এক অসামাণ্য অগ্রসৈনিক। তাঁর জীবনেরও প্রায় এক যুগ কেটেছে জেল ও আত্মগোপনে। বিপ্লবী রবি নিযোগী ২০০২ সালের ১০ মে সূদীর্ঘ কর্মময় জীবনের সমাপ্তি ঘটলেও কোনো বিপ্লবীরই মৃত্যু হয় না। বিপ্লবী রবি নিয়োগীরও মৃত্যু নেই। যুগ-যুগান্তরের মানবমুক্তির লড়াইয়ের ধারায় লড়াকু মানুষের সঙ্গেই থাকবেন, বেঁচে থাকবেন।

৩০ এপ্রিল বিপ্লবী রবি নিয়োগীর ১১২তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। এ উপলক্ষে শেরপুর শহরের নিউমার্কেটে অবস্থিত সাংবাদিক বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ পরিচালনা পর্ষদ শনিবার দুপুরের সভাকক্ষে এক আলোচনা ও অসহায়-দু:স্থদের মধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্য সহায়তা বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

হামিদুর/দেশবার্তা

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০