ঢাকাSaturday , 23 April 2022
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইটি বিশ্ব
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলা
  7. চাকরি চাই
  8. পর্যটন
  9. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. লাইফ স্টাইল
  14. শিক্ষাঙ্গন
  15. সাক্ষাৎকার
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নালিতাবাড়ীতে খাদ্য সংকটে হাতি ধান খেয়ে সাবাড় করছে কৃষকের

admin
April 23, 2022 8:22 am
Link Copied!

শেরপুর জেলার নালিতবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম গুলোতে থামেনি হাতির অত্যাচার। রাতদিন অর্ধপাকা বোরো ধানক্ষেত পাহাড়া দিলেও রক্ষা হচ্ছেনা কোনো ভাবেই। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা গহীন অরণ্য থেকে নেমে আসে বন্যহাতির দল। ক্ষুধার জ্বালায় এসব হাতি সামনে যা পায় তাই খায়। পাহাড়ে তাদের খাদ্য না থাকায় চলে আসে লোকালয়ে। আক্রমণ শুরু করে আবাদী জমিতে।

স্থানীয়রা জানায়, আগের চেয়ে হাতির আক্রমণ পাহাড়ি অঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ। গত ৬/৭ বছর ধরে হাতির দল আরো ক্ষিপ্ত হয়েছে। কোনো বাধাই তারা মানছেনা। প্রতিদিন চলছে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। হাতি খায় ফসল। মানুষ দেয় বাধা। এতে উভয়ের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। মানুষ বিভিন্ন ধরণের লাইট দিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, হৈ-হুল্লুর করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়। কৃষকের জমির ধান খেয়ে এক সময় পেটের ক্ষুধা মিটিয়ে হাতির দল তাদের ইচ্ছে মতো চলে যায় পাহাড়ে।

জানা গেছে, ২০০৭ সালে বন্যহাতি পানিহাটার গারোপল্লীর মায়ের কোল খেকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে মারে শিশু সন্তান বিপুল ও ফারুক ডিও কে। ২০১০ সালে মায়াঘাসি গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন (৪২) হাতির আক্রমণে মারা যায়। গত বছর হাতি মেরে ফেলে পানিহাটা গ্রামে অপূর্ব চাম্বু গং (৫০) নামে এক কৃষককে। এভাবেই হাতির সাথে মানুষের যুদ্ধ চলে। এক সময় গারো পাহাড় ছিল বির্স্তীণ বনভূমি। কালের আবর্তে ধ্বংস হয়ে গেছে গহীন অরণ্য। সংকট দেখা দিয়েছে হাতির খাদ্যের। তাই হাতি খাদ্যের সন্ধানে ছুটে এ পাহাড় থেকে সে পাহাড়ে। তবুও মিটেনা তাদের খাদ্যের জ্বালা। তাই চলে আসে লোকালয়ে। দিন শেষে রাত শুরু হলেই পাহাড়ী বাসীর মধ্যে কাজ করে হাতি আতংক। তবুও টিকে থাকতে হবে পাহাড়ে। বেঁচে থাকতে হলে খাদ্য থেতে হবে। ধান এই অঞ্চলের প্রধান ফসল। দু-বেলা দু-মুঠো ভাতের আশায় পাহাড়ি নিচু জমিতে আবাদের স্বপ্ন দেখে প্রান্তিক কৃষক। প্রতিবছর এসব কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে দেয় হাতি। আবার আশায় বুক বাধে তারা। ক্ষেতে সোনার ফসল ফলায় এসব কৃষকেরা। ওদিকে বন্যহাতি অপেক্ষা করে কখন যাবে ফসলের ক্ষেতে। ধান যখন কালো হয়ে যায় তখন আসে হাতি দলবেঁধে। খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে শেষ করে দেয় ধানক্ষেত। কৃষক সেই ক্ষেত যত্ন করে। ধানের শীষ আসে। পাকতে শুরু করে। তখন হাতির আর সহ্য হয় না। চলে আসে ফসলের মাঠে। খেয়ে সাবাড় করে দেয় পাকা অর্ধপাকা ধান। এবার বোরো আবাদে এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

পানিহাটা গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানায়, ১৩/১৪ দিন পূর্বে নালিতাবাড়ীর পানিহাটা এলাকার চানু পাগলার দেড় একর, হাসমত আলীর ২৫ শতক, কেরামত আলীর এক একর, মোস্তফার প্রায় ২ একর, চান মিয়ার ৪০ শতক, তাইজুল ইসলামের ৩০ শতক, আব্দুল মালেকের ৫০ শতক, হালিম মিয়ার ২৫ শতক সহ প্রায় ২০/২৫ একর জমির বোরোধান খেয়ে সাবাড় করে হাতির দল। একই সাথে হাতির আরেকটি দল চলতি মাসেই নাকুগাঁও, দাওধারা কাটাবাড়ি, ডালোকোনা, কালাপানি, বাতকুচি, টিলাপাড়া, বটতলা, বুরুঙ্গা পাহাড়ি এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই আক্রমণ করছে বন্য হাতির দল। চলতি মাসে এসব অঞ্চলে প্রায় শত একর জমির ধান খেয়ে সাবাড় করেছে বন্যহাতি। এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান মিস্টার লুইজ নেংমিনজা। তিনি বলেন, পাহাড়িবাসী ও জমির ফসল হাতির আক্রমন থেকে রক্ষা করতে চাইলে সরকারী উদ্যোগে হাতির অভায়রণ্য সৃষ্টি করতে হবে। আলী হোসেন, আক্তারুজ্জামান সহ অনেক কৃষক জানান, নাকুগাঁও, দাওধারা কাটাবাড়ি, ডালোকোনা, কালাপানি, বাতকুচি, টিলাপাড়া, বটতলা, বুরুঙ্গা এলকার প্রান্তিক কৃষক আলমগীর হোসেন, সায়েদ আলী, সাইবুল্লাহ, সাধু, আবুল হোসেন, মাহফুজ আলী অনেকের ক্ষেতের পাকা ও অর্ধপাকা ধান গত কয়েকদিনে হাতির দল খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে।

নয়াবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বন্যহাতি আমাদের জাতীয় সম্পদ। হাতি মাঝে মধ্যেই আবাদী জমিতে হানা দিচ্ছে। এতে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারী সহযোগিতা তিনি কামনা করেন।

মধুটিলা ইকোপার্ক রেঞ্জ কর্মকর্তা আঃ করিম জানান, হাতির অত্যাচারে কৃষি জমির পাশাপাশি আমাদের সামাজিক বন ও সুফল বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হাতি যাতে লোকালয়ে আক্রমণ করতে না পারে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা রয়েছে। হাতিকে কোনোভাবেই উত্যক্ত করা যাবে না। কোনোভাবেই হাতির উপর আক্রমণ করা যাবে না। হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। তিনি তার নিজস্ব উদ্যোগে মানুষকে ২০টি লাইট দিযেছেন। তিনি বলেন, হাতি একটি আর্ন্তজাতিক সম্পদ। তাই হাতি ক্ষতি করছে আমরা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। আরো আবেদন জমা আছে। তাই ক্ষতিগ্রস্থদের কিছু না কিছু দেওয়ার চেষ্টা বন বিভাগের আছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি পূর্বক বন বিভাগের ফরমে ক্ষতিগ্রস্থদের আবেদন করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান জানান, বন্য হাতি গুলো ভারত বাংলাদেশ দুই দেশরই। এই হাতি গুলো ফসলের মৌসুমে বাংলাদেশে সময় কাটায়। এতে স্থানীয় গ্রামবাসী ও হাতির দ্বন্দ্বে মানুষও আহত হচ্ছে নিহত হচ্ছে। আবার হাতিও মারা পড়ছে। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল যদি আগের মতো থাকতো তাহলে এই পরিস্থিতি হতোনা। হাতির বসতি নষ্ট হয়ে গেছে। হাতিকে রক্ষা করতে চাইলে বন বিভাগের আওতাধীন সরকারী জমিতে বন রাখতে হবে। বনের জমিতে কোনোভাবেই চাষাবাদ করা যাবে না। কাঠের জন্যও গাছ লাগানো যাবে না। পাহাড় গুলো প্রাকৃতিক রাখতে পারলে হাতি তার বাসস্থানেই থাকবে। সেখানেই খাদ্য খাবে। মানুষের লোকালয়ে প্রবেশ করবে না। হাতি সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন হতে হবে। হাতি বৃহত্তম স্থলজ প্রাণী। তাছাড়া স্থানীয় চাষাবাদে হাতির প্রিয় খাবার চাষ না করা, হাতি যে পথ দিয়ে চলাচল করে সেখানে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে রাখলে, প্রাকৃতিক দেয়াল তৈরি করে বেত ও কাটাযুক্ত গাছ রোপণ করলে হাতির আক্রমণ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে বলে তিনি ধারণা করেন।

মঞ্জুরুল আহসান/দেশবার্তা

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০