শেরপুরে যানজট নিরসন সহ নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬ এপ্রিল শনিবার দুপুরে শেরপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা শেরপুর শহরের অসহনীয় যানজট নিরসন, শহরের প্রবেশমুখে আমনকুড়া বিলে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর, জেলা সদর হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহবায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শেরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, সাবেক সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, জেলা আ’লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামীম হোসেন, নারী নেত্রী আঞ্জুমান আরা যুথী, উদ্যোক্তা আইরিন পারভীন, সিপিবি নেতা সোলায়মান আহমেদ, সাংবাদিক রফিক মজিদ, আবুল হাশিম প্রমুখ। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনউদ্যোগ কমিটির সদস্য সচিব হাকিম বাবুল।
সভায় শহরের যানজট নিরসনে জনউদ্যোগ কমিটির পক্ষ থেকে সড়ক সম্প্রসারণ, রাস্তার দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিয়ন্ত্রণ, সড়কে একমুখি চলাচল, রাস্তা থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের ওপর গুরত্বারোপ করা হয়। সেই সাথে প্রশাসন-পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণে শহরের চর্তুরদিক চক্রাকারে বাইপাস সড়ক নির্মাণ সহ শহরের উন্নয়নে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নাগরিক সভা করে সু-নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।
নারী নেত্রী আঞ্জুমান আরা যুথী অবিলম্বে শহরের প্রবেশ মুখে আমনুকড়া বিলের ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের দাবী জানান। তিনি বলেন, আমরা সরাসরি এর ক্ষতির শিকার হচ্ছি। বাসাবাড়িতে থাকতে পারছিনা ময়লার দুর্গন্ধে, কাক-পশুপাখি ময়লা-বর্জ্য বাড়ীতে টেনে নিয়ে ফেলছে, সেখানে আবার আগুন দিয়ে পুড়ানোর কারণে পাশ্ববর্তী এলাকার নারী-শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। আমরা আমাদের দোকানপাটও ভাড়া দিতে পারছিনা দুর্গন্ধের কারণে। এটি দ্রুত অপসারণ করা দরকার।
শেরপুর প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, জেলা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এখন চরমে পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে চলছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য। হাসপাতাল ঘিরে একটি সিন্ডকেট তৈরি হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ দরকার।
উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, কিছুদিন আগে স্বামীকে নিয়ে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ডায়াবেটিস পরীক্ষার কোন যন্ত্র পাওয়া যায়নি। আউটডোরে প্যারামেডিকেলরাই সব করছেন। একটু জটিল রোগী দেখলেই রেফার্ড করা হয়। এভাবে চলতে পারে না। হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানো দরকার।
সিপিবি নেতা সোলায়মান আহমেদ বলেন, পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে শহরের সব পুকুর, জলায়শয় ভরাট করা হচ্ছে। শহরে হঠাৎ আগুন লাগলে পানির আধার পাওয়া যাবে না। বিল্ডিং কোড না মেনে মার্কেট-ভবন তৈরী হচ্ছে। এসব বিষয়ে এখনই নজর না দিলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় গটতে পারে।
সাংবাদিক আবুল হাশিম শহরের রঘুনাথ বাজারের আবাসিক এলাকা থেকে মদের দোকান উচ্ছেদ করে অন্যত্র স্থানান্তরের দাবী জানান।
শেরপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ও সবুজ আন্দোলনের আহ্বায়ক মেরাজ উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য সচিব সাবিহা জামান শাপলা নাগরিক দূর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ে বৃহৎ আকারে কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শরিফুর রহমান বলেন, আমরা দেখেছি, আন্দোলন চাড়া কিছুই হয় না, দাবী আদায় হয় না। সেজন্য যানজট নিরসন, শহরের প্রবেশমুখে আমনকুড়া বিলের ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর, জেলা সদর হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে সংলাপের পাশাপাশি প্রয়োজনে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার বলে উল্লেখ করেন।
জনউদ্যোগ আহবায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা এসব ইস্যুতে জনমত সংগঠনের জন্য এলাকায় এলাকায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সুধীবৃন্দ ও নাগরিকদের সাথে কথা বলে সামনের দিনে বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করবো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নাগরিক সংলাপ করবো, মানববন্ধন করবো। আমাদের প্রাণের শহর শেরপুরকে নান্দনিক শেরপুর হিসেবে গড়ে তুলতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সেখানে সাংবাদিক বন্ধু সহ সকলের অংশগ্রহণ কামনা করছি।
মতবিনিময় সভায় জনউদ্যোগ কমিটির সদস্য, সুধীবৃন্দ এবং জেলা পর্যায়ে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
হামিদুর/দেশবার্তা