শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠী হিজড়াদের আত্মকর্মস্থানে জেলা প্রশাসক দিলেন একটি ইজিবাইক। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজকল্যাণ পরিষদের তহবিল থেকে ২ লাখ টাকায় কেনা এই ইজিবাইকটি বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে আন্ধারিয়া তৃতীয় লিঙ্গ গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারি হিজড়াদের নিকট প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকারের হাতে ইজিবাইকটির চাবি হস্তান্তর করেন।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদা ইয়াসমিন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস, সহকারি কমিশনার (ভূমি) তনিমা আফ্রাদ, সমাজসেবা বিভাগের রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা আরিফুর রহমান, কবি হাসানুজ্জামান সরাফত, জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার, জনউদ্যোগ কমিটির সদস্য সচিব সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় সদর উপজেলার ইউএনও হিজড়াদের কল্যাণের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকাও প্রদান করেন।
জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার বলেন, আমরা আর ভিক্ষাবৃত্তি, চাঁদাবাজি নয়। নিজেরা উপার্জন করে, আয় করে সমাজে মাথা উঁচু করে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। সরকারের গুচ্ছগ্রাম আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা এখন নিজেরা নানা আয়বর্ধনমুলক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে উপার্জন করতে চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসন সবসময় আমাদের সহযোগিতা করছে। এই ইজিবাইক আমরা নিজেরা চালাবো, এতে আমাদের যা আয় হবে, তা দিয়ে আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে চেষ্টা করবো।
জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, আবাসনে বসবাসকারী হিজড়াদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তারা যাতে আয়বর্ধনমুলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে এজন্য তাদের ব্লক-বাটিক-সেলাই প্রশিক্ষণ, হাঁস-মুরগী, গবাদি পশুপালন, মাছ চাষ সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, অনুদান ও ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এবার সমাজকল্যাণ তহবিল থেকে একটি ইজিবাইক প্রদান করা হলো। আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর সরকারি খাসজমিতে হিজড়াদের জন্য গড়ে ওঠেছে ‘স্বপ্নের ঠিাকানা’ গুচ্ছগ্রাম। সেই গুচ্ছগ্রামে জেলার ৪০ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জমিসহ ঘর। গুচ্ছগ্রামটি হিজড়াদের নতুন স্বপ্নের ডানা মেলতে সহায়তা করছে। ভিক্ষবৃত্তি ছেড়ে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হয়েছে শেরপুরের হিজড়ারা। কেউ কেউ হাঁস-মুরগী, গবাদিপশু পালন করছেন, কেউবা নিয়োজিত হয়েছেন মাছ চাষে, কেউ চা-পানের দোকান দিয়েছেন। এভাবেই এগিয়ে চলছে তাদের জীবনধারা।
হামিদুর/দেশবার্তা